পান্তাবুড়ির পাল্লায় আমি সাধারণত খুব সময় মেপে কোথাও যেতে পারিনা। দেখা যাবে, পহেলা বৈশাখে রমনায় যাবার কথা ভোর ছয়টায়। আর আমি বাসা থেকে বের হচ্ছি সকাল আটটায়। একবার কিভাবে যেন এক বৈশাখে সময়মতো রমনায় পৌছে গিয়েছিলাম। মানিব্যাগটাকে জবাই দিয়ে চুপচাপ চোরের মত পান্তা খাচ্ছি এই সময় এক ভদ্রলোককে দেখি, পান্তা বিক্রেতা জিজ্ঞাসা করছেন, ‘কি হে, তোমার ইলিশের টুকরার সাইজ মনে হয় ছোট হয়ে গেছে।’ পান্তাওয়ালা সহজ গলায় বললো, ‘স্যার, ইলিশের টুকরার সাইজ ছোট হয়নি। মনে হয়, আপনার মুখের সাইজটা একটু বড় হয়ে গেছে।’
ব্যাস বেঁধে গেল বিশাল হাউকাউ। আমি হাউকাউ দেখছি আর আগের মতই পান্তা খাচ্ছিলাম। এসময় পাশ থেকে শুনলাম, ‘আব্বু আমাকে পান্তাবুড়ি দেখাও!’ তাকিয়ে দেখি এক ভদ্রলোককের পাঞ্জাবি ধরে তার ছোট্ট মেয়েটা টানাটানি করছে। মেয়ের মুখে ‘দেখাও! দেখাও!’ শুনতে শুনতে ভদ্রলোক বেশ বিরক্ত।
মেয়েও পান্তা বুড়ি না দেখে বাবাকে ছাড়বে না। ভদ্রলোক বেশ বিপদে পড়ে গেলেন। এই যুগে তিনি পান্তাবুড়ি পাবেন কোথেকে! হঠাৎ এক বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে আড়চোখে মেয়েকে দেখিয়ে বলে দিলেন, ‘ওই যে চুলপাকা মহিলা, উনিই পান্তাবুড়ি।’ ছোট্ট মেয়েটা একছুটে সেই মহিলার কাছে গিয়ে বলে বসলো, ‘অ্যাই পান্তাবুড়ি, তোমার পান্তা চুরি করে খাওয়া সেই পান্তা চোরটা কোথায়?’ মহিলা প্রথমে থতমত খেয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে একটু হেসে আঙুল তুলে আমাকে দেখিয়ে দিলেন।
মেয়েটি আমার সামনে এসে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো, ‘এ্যাই তুমি পান্তাবুড়ির চুরি করা পান্তা খাচ্ছ বুঝি?’ কথা শুনে আশেপাশের সবাই এমনভাবে আমার দিকে ফিরে তাকালো যেন সত্যিই আমি চুরি করে পান্তা খাচ্ছি। মেজাজটা ভীষণ খারাপ হয়েছিল সেদিন।
ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা আঁষটে গন্ধের কারণে অনেকেই ইলিশ মাছ খেতে পারেন না। তবে জ্যেতিষীরা বলেন, কর্কট রাশির জাতক হলে নাকি আঁষটে-পাঁশুটে সবরকম গন্ধের মাছই চিবিয়ে খেয়ে ফেলা যায়। মাছ খাওয়াটা মোটেও খারাপ কিছু নয়। তাই হয়তো বৈশাখের প্রথম দিনে পান্তার সঙ্গে ভাজা ইলিশ না হলে জমে না। ভাজাই হোক আর সর্ষের সাথেই হোক ইলিশ মাছের শরীরে আসলেই কি তিরিশটা কাঁটা থাকে!
মনে হয় আরও বেশি থাকে। কমও হতে পারে। আগ্রহীরা গুণে দেখতে পারেন। কেউ বিশেষ আপত্তি করবে বলে মনে হয় না।
ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা মানে আসলে তিরিশ রকম যন্ত্রণা। ব্যাপারটা একটু সহজভাবে বলতে গেলে, ইলিশ মাছ বাজারে সহজে পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও সেটা কোন নদীর তা নিয়ে নানান সন্দেহ দেখা দেয়। বিক্রেতা ইলিশের কান দেখিয়ে বলে, ‘পদ্মার’। ক্রেতা মাছ উল্টেপাল্টে ধারণা করেন ‘মেঘনার’। সন্দেহ দূর হলেও মাছের সাইজ পছন্দ হয় না। সাইজ মিললেও দামে বনে না। দামে বনলে রান্না করার পর খেতে স্বাদ লাগে না। স্বাদ লাগলেও কাঁটা বেছে খেতে হয়। কাঁটা বাছতে না পারলে কাঁটা গলায় বিঁেধ যায়। সেই কাঁটা নামাতে বিড়ালের পা ধরে বসে থাকা। শেষ পর্যন্ত বিড়ালের খামচি খেয়ে টিটেনাসের টিকা নিতে ডাক্তারের কাছে ছোটা। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, ইলিশ মানে কেন তিরিশ কাঁটা!
বৈশাখি অনুসন্ধান পহেলা বৈশাখ কবে? কত তারিখ? বৈশাখের আগে আগে এই প্রশ্নটা খুব শোনা যায়। যারা জ্ঞানী তারা প্রশ্ন শুনে সরলভাবে বলে দেয়, ‘১৪ এপ্রিল।’ কিন্তু এর মাঝে খানিকটা অবহেলা রয়েছে। অবহেলাটা হলো ‘পহেলা বৈশাখ’ কবে সেটা বাংলা মাসের তারিখ হিসাব করে কেউ বলে না। ইংরেজি মাসের ‘১৪ এপ্রিলকে’ দিয়ে পহেলা বৈশাখ কবে সেটা মনে রাখতে হয়!
বাংলা সাল কিংবা তারিখ ঠিকমত মনে রাখতে না রাখার পেছনে দেয়ালে ঝুলে থাকা ক্যালেন্ডারগুলোর ছোটখাট একটি চক্রান্ত রয়েছে। বেশিরভাগ ক্যালেন্ডারেই ইংরেজি তারিখের পাশাপাশি বাংলা মাসের তারিখ দেয়া থাকে না। থাকলেও খুব ছোট করে দেয়া থাকে। যাতে তারিখগুলো ঠিকমতো চোখে না পড়ে।
সময় সবারই কম তাই শেষকালে শর্টকাটে বিদায়। দূর হয়ে যাক সব হতাশা কষ্ট...আসুক ভালোবাসা... প্রভাতি স্বপ্ন...শুভ নববর্ষ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাহমুদা rahman
ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা মানে আসলে তিরিশ রকম যন্ত্রণা। ব্যাপারটা একটু সহজভাবে বলতে গেলে, ইলিশ মাছ বাজারে সহজে পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও সেটা কোন নদীর তা নিয়ে নানান সন্দেহ দেখা দেয়। বিক্রেতা ইলিশের কান দেখিয়ে বলে, ‘পদ্মার’। ক্রেতা
মাছ উল্টেপাল্টে ধারণা করেন ‘মেঘনার’। সন্দেহ দূর হলেও মাছের সাইজ পছন্দ হয় না। সাইজ মিললেও দামে বনে না। দামে বনলে রান্না করার পর খেতে স্বাদ লাগে না। স্বাদ লাগলেও কাঁটা বেছে খেতে হয়। কাঁটা বাছতে না পারলে কাঁটা গলায় বিঁেধ যায়। সেই কাঁটা নামাতে বিড়ালের পা ধরে বসে থাকা। শেষ পর্যন্ত বিড়ালের খামচি খেয়ে টিটেনাসের টিকা নিতে ডাক্তারের কাছে ছোটা। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, ইলিশ মানে কেন তিরিশ কাঁটা!.বাহ সুন্দর তো...........
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।